Rose Good Luckঅন্তরে নিরন্তর Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১১:০৭:১১ রাত

‘কতটা পথ পেরোলে কাউকে পথিক বলা যায়?’

ছায়ায় ছায়ায় আলোর মায়ায় পথ তো আর কম পার হলনা! মেঘে মেঘে বেলাও অনেক হয়েছে। এখন বেলা শেষে ফিরে যাবার সময় হয়ে এলো বুঝি।

মধ্যবয়স।

সময়ের ধাপগুলোর একটি। বড্ড বিবর্ণ সময়? ইদানিং আমানকে বেশ ভাবায়। তবে ভেবে ভেবে উদাস হওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ হয় কি?

কিছু কিছু সন্ধ্যা আছে। আমানের নিজের। যখন খোলা আকাশের নিচে- ট্রলারের ছাদে বসে- প্রবল বাতাসের তোড়ে ভিতরে বাহিরে এলোমেলো হতে ভালো লাগে। আর ভালোলাগাদের কখনো নিরাশ করে না আমান।

মনের সমান্তরালে অন্য একটি লাইন ধরে চলার চেষ্টা করে সে।

এই সন্ধ্যায় আমান ধ্যানমগ্ন এক যোগী! চাঁদের আলোয় তীর পর্যন্ত দেখা যায়। আঁধারের বুক চিরে রুপালী জলস্রোত। নিস্তব্ধ চারদিক। কেবল ট্রলারের একটানা যান্ত্রিক আওয়াজ বাতাসে ভেসে বেড়ায়... বড্ড অস্থির।

অস্থির আমানও। চিন্তাভাবনার অণূজগতে এইমাত্র প্রবেশ করেছে।

পৃথিবীতে সব থেকে দুরূহ কাজ কোনটি?

আমানকে জিজ্ঞেস করলে এক কথায় বলবে- ‘ কবিতা লিখা।‘

ঠিক এই মুহুর্তে নিঃসঙ্গ এক ট্রলারের ছাদে বসে থাকা- অন্ধকারে- এক ছায়াপুরুষের অনুভবের প্রতিটি শিরায় শিরায় দু’টি শব্দ বয়ে চলেছে।

‘রোদেলা দুপুর’।

এখন লিখতেই হবে। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপতে হবে। ভাবের জগতে এ এক দুর্বোধ্য অনুভব। আমান প্রথমে অনুভবের প্ল্যাটফর্মে কবিতাদের জড়ো করে।

আল্লামা রুমির একটি উক্তি মনে পড়ে-

“ Close both eyes to see with the other eye.”

মনের চোখ খুলে একজন আমান অনুভূতিগুলোর স্পন্দন অনুভব করে। কোন সুদূর অজানালোক থেকে কবিতারা সব ডানা মেলে উড়ে আসে। আমান ওদের ডানা ঝাপ্টানোর আওয়াজ পায়...

‘ এক রোদেলা দুপুরে

মুহুর্তগুলো বিষণ্নতার ধুলোয়মাখা-

জমাট বেঁধেছে হৃদয়ের কার্ণিশে।

অন্ধকারগুলো আরো নিকশ কালো

পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের উদরে স্ফীত।

দোয়াতের কালির মত

এক টুকরো আকাশ-

মুহুর্তে সেজে ওঠে তুলির এক পোঁচে!

এমনই এক নিঃসঙ্গ দুপুরে

দুরন্ত বাতাসের মাতাল ছুঁয়ে যাওয়ার দিনে,

ঝরা পাতার বুক মাড়িয়ে, ভালোলাগাগুলোর

চলে যাবার নির্মম ধ্বনি

এ বুকে বড্ড বেজে ওঠে।

মরা গাছে নিঃসঙ্গ দোয়েলের শীষ

কোমলতায় শীতল পাটির ছায়ার মত

আবেশে জড়ানো! সেই সুরে সুরে

বেহায়া ভালোলাগারা মুখ ফিরিয়ে চলে যায়।

বিজন বনের নির্জনতাকে বুকে নিয়ে

ফিরে আসে পলাতক সময়। পথ হারিয়ে

অভিমানী ভালোলাগারা

আরো গভীরের পথিক এখন।

রোদ, বৃষ্টি আর শীতের শুষ্কতায়

অরণ্যের বুক চেরা দীর্ঘশ্বাসের বহর

ক্রমেই স্তিমিত হয়... তবুও ওরা ফিরে না।

সেই থেকে প্রতিটি মেঘাচ্ছন্ন বিকেল

উন্মুক্ত হৃদয়ে অপেক্ষায়-

এই বুঝি ভালোলাগারা ফিরে এলো!

বিকেল গড়িয়ে সাঁঝ নামে... আবার বিকেল

এভাবে একের পর এক

কত সাঁঝ এলো... গেলো! তবুও এক

রোদেলা দুপুরের কোনো গোপন স্মৃতি হয়ে

‘স্পেশাল কেউ’ বোধের আড়ালে

অন্তরের ভিতরে বাহিরে রয়েই যায়।‘

কষ্টগুলি বুঝি একে অপরের সাথে ‘হাইপার-লিংকড’। যখন আসে- পিছনে একে অন্যকে টেনে আনে।

কষ্টের উপর কষ্ট। তীব্র কষ্ট!

কষ্টের ‘ওয়েভগুলো’ যখন হৃদয়ে তীব্র আঘাত হানে- ঐ মুহুর্তগুলো কেমন? অনুভবে সহজবোধ্য হলেও, প্রকাশের বেলায় তত সহজ মনে হয় কি?

নি:সংগ ট্রলারে একা আমান। ছাদের উপর কষ্টকর তীব্র ওয়েভগুলো অনুভব করতে চায়। বন্ধ দু'চোখ নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। দুই হাত সজোরে আকাশের দিকে উঠে যায়- মুষ্টিবদ্ধ দৃঢ় অনুভবে কেঁপে উঠে জগতসংসার। আমানের অনুভূতিগুলো এখন নির্বোধ। বোধশক্তিরা আমানের স্পেশাল কোনো একজনের সাথে হারিয়েছে। ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে-পারুকে হারানোর বেদনায় জগত সংসার ছিন্ন ভিন্ন করে শ্রবনাতীত চিৎকারে আমান নিজের কষ্টকে জানান দিতে চায়। কিন্তু একজন ছাড়া কেউ শুনতে পায় না। যিনি শুনতে পান- আমান তাকে চিনে না। আমান যাকে চিনতে চায়- সে আমানকে চিনতে চায় না।

চেনা অচেনার গন্ডী একসময় পার হয়। ওর বোধের জগতের অনুভূতিরা সাময়িক ফিরে আসে। আলো হতে চেয়ে- আলোর মায়ায় ছায়াজীবন কাটানো একজন আমানের উপলব্ধির জগত নাড়া খায়... অন্তরে বোধিবৃক্ষের জন্ম হয়।

এক সব্যসাচী পুরুষ ভরা সাঁঝের আঁধার সরিয়ে আলো খোঁজে... আলো ছুঁতে চায়... হতে চায়! একজন চলে যাওয়া ‘তুমি’কে খুঁজতে গিয়ে ‘আমি’ আর ‘তিনি’র মধ্যকার ব্যবধানটুকুও আজ তার জানা হয়ে যায়!

“ I am He whom I love

And He whom I love is, I,

We are two spirits indwelling one body,

When thou seest me, thou seest Him,

And when thou seest Him, then thou

Doest see us both. “ ১

নিজের মনে এক প্রসন্ন অনুভূতি! আমানের চেতনার দরোজার ঠিক ওপারেই এই অনুভূতি দাঁড়িয়ে থেকে ওকে বলে,

‘তিনি’ যদি ‘আমি’ ই হই, তবে ‘তুমি’ও আমার হবে।

পারু আর আমান- অনুভবে কল্পনায়- আলাদাই বা ছিল কবে?

* ১ : Mansur Hallaj

বিষয়: সাহিত্য

৯৩২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

353488
১০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৫০
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মাশ-আল্লাহ! খুবই ভালো লিখেছেন! অনেকদিন পর ব্লগে ঢুকেই আপনার লেখা পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে গেলো। নিয়মিত হবেন আশা করি।
১০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৫৫
293475
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ধন্যবাদ। আপনি ভালো ছিলেন তো?
হ্যা, নিয়মিত হবার চেষ্টা করছি।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন, জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
353493
১১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৩৯
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : কবিতা ছন্দ এসব আমার মাথায় ঢোকেনা কঠিন শব্দমালা। যতটুকু বুঝেছি বেশ চমৎকার।
১১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০২:১৮
293486
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ। এই লিখাটি পাঠককে বিভ্রান্তকারী একটা লিখা। যারা বিভ্রান্ত হতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি।Happy
353713
১২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:১৩
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : দারুণ লিখেছেন। অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। রুমির উক্তিটা, রোদেলা দুপুর কবিতাটা, সব মিলিয়ে গল্পটা দারুণ লেগেছে।
১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:২৫
293963
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ সিরাজ ভাই। আপনাকেও অনেক দিন পর দেখলাম। ভালো লাগলো।

শুভ সকাল।Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File